মোবাইলে ভয়েস কল পর্যাবেক্ষনের পাশাপাশি। এবার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ফেইজ-২ এর আওতায় সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করবে সরকার।
মেইল আদান-প্রদান, ফেসবুকের চ্যাট থেকে শুরু করে ফ্রি আ্যাপসের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কথা বলার রেকর্ডও এর আওতায় থাকবে। এজন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হচ্ছে অত্যাধুনিক ডিভাইস। জার্মানির প্রতিষ্ঠান ট্রভিকর থেকে ওই ডিভাইস কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু ফান্ডের। মূলত জঙ্গি ও অপরাধী শনাক্ত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে দেশের ১০ শ্রেণীর শীর্ষ কর্মকর্তা পদাধিকার বলে এই মনিটরিংয়ের আওতার বাইরে থাকবেন।
এ তালিকায় আছেন প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও পুলিশের আইজি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি)-এর অধীনে ২০০৬ সাল থেকে ভয়েস কল পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটও পর্যবেক্ষণ করবে। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছে দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
ভয়েস কলের ক্ষেত্রে বর্তমানে একই সময়ে ৫ হাজার ফোন কল রেকর্ড করা সম্ভব হয়। তবে অত্যাধুনিক ডিভাইসে একই সঙ্গে ৫০ হাজার ফোন কল রেকর্ড ও অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে ১২ কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছে। ৫টি অপারেটরদের ইন্টারনেটের গ্রাহক ৪ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার।
এর মধ্যে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৪ কোটি ১৩ লাখ মানুষ। এদিকে ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও আনা হচ্ছে সর্বাধুনিক ডিভাইস। এনটিএমসির কারিগরি টিমের সদস্য ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিনিয়র এসিসট্যান্ট ডিরেক্টর জিয়ান শাহ কবির বলেন. ফেইজ-২ এর আওতায় ইন্টারনেট মনিটরিংয়ের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
এরই মধ্যে টেন্ডারসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এদিকে বিটিআরসির সংশ্লিষ্টরা জানান, এনটিএমসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে টাকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে। ফাইলটি এখন রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। টাকা-পাওয়া গেলেই ডিভাইসটি দ্রুত জার্মানি থেকে কিনে আনা হবে। এর আগে বিকল্প উপায়ে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করে এনটিএমসি। তাতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি।
এনটিএমসির এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, মোবাইল অপারেটরসহ ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সার্ভিসেস (আইজিডব্লিউ), ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ সার্ভিসেস (আইসিএক্স), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিসেস (আইআইজি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সেস (নিক্স)সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ চেয়ে অনুরোধ করে। কোম্পানি অনুযায়ী কারও কাছ থেকে ৪০ কোটি, কারও কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকা চাওয়া হয়। কেউই ওই অনুরোধ রক্ষা করেনি।
শুধু রাষ্টায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল ৫ কোটি টাকা এনটিএমসিকে দেয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে টেলিযোগাযোগের ব্যবসা কুক্ষিগত। তাই এনটিএমসি ওই টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে ২০০৬ সালে ভয়েস কল পর্যবেক্ষণের জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জার্মানির ট্রভিকর থেকে অত্যাধুনিক ডিভাইস কেনা হয়। ওই সময় মোবাইল অপারেটরসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই টাকা সংগ্রহ করা হয়। এবারও একই উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয় এনটিএমসি।
এর আগে ২০১৩ সালে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তৃতীয় প্রজন্মের থ্রি-জি সেবা যাতে অরাজকতার জন্য ব্যবহার না হয় সে জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় এনটিএমসি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল অপারেটরদের সব ধরনের কল, ডাটা এবং থ্রি-জি সেবা পর্যবেক্ষণ শুরু করে তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, মোবাইল অপারেটররা কোন গ্রাহকের ফোন কল পর্যবেক্ষণ করতে পারেন না। তাদের সে ক্ষমতা দেয়নি বিটিআরসি। কেবল এনটিএমসি এসব পর্যবেক্ষণ করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানান, ঢালাওভাবে ভয়েস কল ও পর্যবেক্ষণ করে না প্রতিষ্ঠানটি। অপরাধি ধরতে ও তাদের শনাক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের ভয়েস কল পর্যবেক্ষণ করা হয়। ইন্টারনেট মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রেও একই নীতি মেনে চলা হবে।
- See more at: http://www.bd24live.com/bangla/article/41350/index.html#sthash.R8TMmCug.dpuf